আল্লহ তায়া’লা যে সমস্ত মহান ইলমের তাবলীগ ও প্রচারের জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আ’লাইহিমুস সালামকে মাধ্যম বানাইয়াছেন সেই সমস্ত ইলম হইতে পরিপূর্ণরূপে উপকৃত হওয়ার জন্য ইলম মোতাবেক ইয়াকীন ও দৃঢ় বিশ্বাস তৈরী করা জরুরী।
আল্লহ তায়া’লার কালাম ও রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক হাদীস পড়া ও শোনার সময় নিজেকে সম্পূর্ণ অজ্ঞ মনে করিবে অর্থাৎ মানুষের দেখাশোনা ও জ্ঞান অভিজ্ঞতা হইতে বিশ্বাস হটাইতে হইবে, গায়েবী খবরের উপর বিশ্বাস করিতে হইবে, যাহা কিছু পড়া হয় অথবা শোনা হয় উহাকে অন্তর দ্বারা সত্য মানিতে হইবে, যখন কুরআন শরীফ পড়িতে বা শুনিতে বসিবে তখন এইরূপ মনে করিবে যে, আল্লহ তায়া’লা আমাকে সম্বোধন করিতেছেন। যখন হাদীস শরীফ পড়িতে বা শুনিতে বসিবে তখন এইরূপ মনে করিবে যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সম্বোধন করিতেছেন। কুরআন ও হাদীস পড়া ও শোনার সময় উহা যাঁহার কালাম তাঁহার আজমত যত বেশী পয়দা হইবে এবং উহার প্রতি যত বেশী মনোযোগ হইবে তত আল্লহ তায়া’লা ও রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কথার আছর বেশী হইবে।
সুরা মায়েদায়ে আল্লহ তায়া’লা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করিয়া এরশাদ করিতেছেন —
وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَىٰ أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ
অর্থঃ আর যখন তাহারা ঐ কিতাবকে শ্রবন করে যাহা রসূলের উপর অবতীর্ণ হইয়াছে তখন (কুরআনে কারীমের প্রভাবে) আপনি তাহাদের চক্ষুসমূহকে অশ্রু প্রবাহিত অবস্থায় দেখিবেন। ইহার কারণ এই যে, তাহারা সত্যকে চিনিতে পারিয়াছে। (সুরা মায়েদাহঃ ৮৩)
অন্যত্র আল্লহ তায়া’লা তাঁহার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে সম্বোধন করিয়া এরশাদ করিতেছেন —
فَبَشِّرْ عِبَادِ ﴿١٧﴾ الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّـهُ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ ﴿﴾١٨
অর্থঃ আপনি আমার ঐ সকল বান্দাদেরকে সুসংবাদ শুনাইয়া দিন যাহারা আল্লহ তায়া’লার এই কালামকে মনো্যোগ সহকারে শুনে, অতঃপর উহার ভাল কথাসমূহের উপর আমাল করে, ইহারা ঐ সমস্ত লোক যাহাদেরকে আল্লহ তায়া’লা হেদায়েত দান করিয়াছেন, আর ইহারাই বুদ্ধিমান। (সুরা যুমারঃ ১৭-১৮)
এক হাদীসে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন,
হযরত আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, যখন আল্লহ তায়া’লা আসমানের কোন হুকুম জারী করেন, তখন ফেরেশতাগন আল্লহ তায়া’লার এই হুকুমের প্রভাবে ও ভয়ে কাঁপিয়া উঠেন এবং আপন পাখাসমূহকে নাড়িতে আরম্ভ করেন। আর ফেরেশতাগন আল্লহ তায়া’লার হুকুম এইরূপে শুনিতে পান যেমন মসৃণ পাথরের উপর লোহার শিকল মারিলে আওয়াজ হয়। অতঃপর যখন তাঁহাদের অন্তর হতে ভয়ভীতি দূর করিয়া দেওয়া হয় তখন তাঁহারা একে অপর জনকে জিজ্ঞাসা করেন যে তোমাদের পরওয়ারদিগার কি হুকুম দিয়াছেন? অপরজন বলেন হক কথার হুকুম করিয়াছেন এবং নিঃসন্দেহে তিনি সুমহান, মর্যাদার অধিকারী, সর্বাপেক্ষা বড় (যখন ফেরেশতাদের প্রতি আদেশটি স্পষ্ট হইয়া যায় তখন তাঁহারা উহাকে কার্যে পরিণত করিতে লাগিয়া যান।) (বুখারী)
অপর এক হাদীসে এরশাদ হইয়াছে —
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, নবী করীম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে এরশাদ করিতেন, তখন উহাকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করিতেন, যেন উহা বুঝিয়া লওয়া যায়। (বুখারী)
এইজন্য প্রতি হাদীস তিন করিয়া পড়া অথবা শোনা উচিত। ধ্যান, মুহাব্বাত ও আদাবের সহিত পড়া ও শোনার মশক করিবে। পরস্পর কথাবার্তা বলিবে না। অযুর সহিত দোজানু হইয়া বসিবার চেষ্টা করিবে। হেলান দিয়া বসিবে না। নফসের খেলাপ মুজাহাদার সহিত এই ইলমের মধ্যে মশগুল হইবে। আসল উদ্দেশ্য হইল এই যে, কুরআন ও হাদীস দ্বারা যেন অন্তর প্রভাবিত হয়। আল্লহ তায়া’লা ও তাঁহার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াদাসমূহের উপর দৃঢ় বিশ্বাস পয়দা হইয়া দ্বীনের প্রতি এমন আগ্রহ সৃষ্ট হয়, যাহাতে প্রত্যেক আমালের মধ্যে উলামা কেরামদের নিকট হইতে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা ও মাসায়েল জানিয়া আমাল করিবার যোগ্যতা পয়দা হইতে থাকে।
No comments:
Post a Comment