Wednesday, July 20, 2016

কেন এই বিশ্ব ইজতেমা?

আল্লাহ তায়ালা বহুত বড় জিম্মাদারি দিয়ে আমাদের দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। সেই জিম্মাদারির অনুভূতি অর্জনের লক্ষ্যে প্রতি বছর টঙ্গী ময়দানে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এখানে এসে তামাশা দেখা, ঘোরাঘুরি করা, খানাপিনায় ব্যস্ত হয়ে পড়া ইজতেমার উদ্দেশ্য নয়, বরং জিন্দেগির মাকসাদ অর্জন এবং জীবনকে আখেরাতমুখী গড়ার লক্ষ্যে আমরা ইজতেমায় আসি। দুনিয়াতে নানা উদ্দেশ্যে ছোট-বড় বিভিন্ন ইজতেমা (সমাবেশ) হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে বিশাল ইজতেমা হবে। সেখানে দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব মানুষের জমায়েত হবে। সেদিন হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষের জীবনের হিসাব নেয়া হবে। প্রত্যেককে পাঁচটি বিষয় জিজ্ঞেস করা হবে। . জীবন সম্পর্কে; কোনো কাজে তা ব্যয় করা হয়েছে? . যৌবনকাল সম্পর্কে; কীভাবে তা কাটানো হয়েছে? . সম্পদ সম্পর্কে; কীভাবে তা উপার্জন করা হয়েছে? . সম্পদ কোন পথে খরচ করা হয়েছে? . এলমে দ্বীন সম্পর্কে; তার ওপর আমল হয়েছে কিনা?
জীবন সম্পদ আল্লাহর দেয়া আমানত। এর সহিহ ইস্তিমাল (ব্যবহার) করা চাই। মোমিনের জান-মাল আল্লাহর কাছে অত্যন্ত দামি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ মোমিনদের জান মালকে জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন।' হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন মক্কার ধনাঢ্য
নারী। ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি সমুদয় সম্পদ প্রিয়নবী (সা.) খেদমতে সপে দিয়েছেন। আর রাসুল (সা.) তা দ্বীনের কাজে ব্যয় করেছেন। এমনকি তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছেন। তালিযুক্ত কাপড় পরিধান করেছেন। হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) ছিলেন অনেক বড় ব্যবসায়ী। অঢেল সম্পদের মালিক। দ্বীনের জন্য অকাতরে সম্পদ খরচ করে তিনি সম্বলহীন হয়ে পড়েন। মৃত্যুর সময় তিনি অসিয়ত করে যান, তাকে যেন গায়ের পুরনো কাপড়েই কাফন করা হয়। তাবুকের যুদ্ধে হজরত ওসমান (রা.) এই পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করেছেন যে, রাসুল (সা.) তাকে বলেছেন, 'আজকের পর আর কোনো আমল না করলেও তোমার নাজাতের জন্য ইহাই যথেষ্ট।' সাহাবাদের মধ্যে অনেকে মজদুরি করে আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করতেন। তারা বলতেন, আল্লাহর রাস্তায় যে মাল ব্যয়িত হয়েছে, তা নিজের কাছে অবশিষ্ট সম্পদ অপেক্ষা অনেক উত্তম। সাহাবাদের জীবন সম্পদ মাকসাদ অনুযায়ী ব্যয়িত হয়েছিল। ফলে আল্লাহ তাদের প্রতি, তাদের বিবি-বাচ্চাদের প্রতি ছিলেন সন্তুষ্ট। আমাদের বিশ্ব ইজতেমা থেকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, সাহাবাদের মতো আমরাও আমাদের জান, মাল, সময় আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেব।' আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা রাসুল (সা.) এর কাজ ছিল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নবীকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, 'আপনি বলুন, এটাই আমার পথ। আমি তোমাদের আল্লাহর পথে ডাকি পূর্ণ একিনের সঙ্গে।' মক্কার কাফেররা রাসুল (সা.) কে দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার জন্য লোভনীয় প্রস্তাব পেশ করেছিল। কিন্তু তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, 'তোমরা যদি আমার এক হাতে আকাশের সূর্য এবং অপর হাতে চন্দ্রও এনে দাও, তবুও আমি দাওয়াতের কাজ বন্ধ করব না।'
রাসুল (সা.) এর অনুকরণে সাহাবায়ে কেরাম দ্বীনের দাওয়াতকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ছিলেন। তারা দ্বীনের কাজকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য দিতেন। দ্বীনের কাজ পুরো করে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ করেছেন। তাদের ত্যাগ কোরবানির বদৌলতে অল্প দিনের মধ্যে দুনিয়াতে দ্বীনের পরিবেশ কায়েম হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের জগদ্বাসীর জন্য নমুনা বানিয়েছেন। আমরা দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দিলে আমাদের পরিবেশ বদ্বীন গ্রাস করবে। আমাদের সন্তানাদি বদ্বীন হবে। আমাদের ঘরে গোমরাহির অাঁধার ঢুকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।'
ইজতেমার ময়দান থেকে আমরা নিজের মধ্যে দাওয়াতি মেজাজ তৈরি করব। আমার তাশকিলে কোনো ভাই আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেলে আমি অফুরন্ত সওয়াবের ভাগি হবো। ইজতেমার পুরো সময়ে আমরা তাওহিদ, রেসালাত আখেরাতের আলোচনা করব। এখানে অনর্থক কোনো কাজে বা কথায় লিপ্ত হবো না। তাহলে আমাদের আসা এবং কষ্ট বৃথায় পর্যবসিত হবে

অনুলিখন, মাহবুবুর রহমান নোমানি

Post Collect From : Daily Ittefaq.

No comments:

Post a Comment